হাসিনার রক্তাক্ত অধ্যায়ের পর আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান কি সম্ভব?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম

গত ২০২৪-এর জুলাইয়ে এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, এখন দলটি বিভক্ত এবং সংকটাপন্ন। দলটির অনেক নেতা যেখানে ব্যর্থতার দায় এড়াতে ব্যস্ত, সেখানে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা জবাবদিহিতা ও পরিবর্তনের দাবি তুলছেন। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে সেই কথা উঠে এসেছে।

 

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া ছাত্র-নেতৃত্বাধীন প্রতিবাদ আন্দোলন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সরকারের কঠোর নীতিমালা ও জনবিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত। আগস্টের ৫ তারিখে, সহিংসতার শিকার হয়ে ৮৩৪ জন নিহত এবং ২০,০০০ জন আহত হন। আন্দোলনের চূড়ান্ত দিনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা গণভবন ছেড়ে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে যান,এবং এখনো ভারতে অবস্থান করছেন।

 

আওয়ামী লীগের অনেক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও নেতারা এখনও দলীয় ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এই পতনকে একটি "আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র" বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে, তৃণমূল পর্যায়ের অনেক কর্মী তাদের নিজেদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন ও অবহেলিত সে কথা প্রকাশ করছেন।

 

দলীয় শৃঙ্খলার অভাব, গণতান্ত্রিক চর্চার সংকট ও পরমত অসহিষ্ণুতা এবং দমননীতির জন্য দলটির ভঙ্গুর অবস্থার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন এলাকার আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ ইউনিট দীর্ঘদিন ধরে পুরনো কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, নতুন নেতৃত্বের অভাব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

 

এই আন্দোলন, যা "জুলাই বিপ্লব" নামে পরিচিত, তা 'কোটা সংস্কারের' দাবিতে শুরু হয়েছিল। পরে তা হাসিনার সরকারের দমননীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার দাবির আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে একজন ছাত্রনেতার আবু সাইদের মৃত্যু থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

 

এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন। আন্দোলনের নেতা মাহফুজ আলম জানিয়ে দেন, আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের পুনরুত্থানের জন্য দলটির ক্ষমা চাওয়া, বর্তমান মতাদর্শ ত্যাগ, এবং হাসিনার পরিবারকে নেতৃত্ব থেকে সরানো এবং ২০২৪ সালের ঘটনাগুলোর জন্য দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

 

দলের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের অনেকেই মনে করেন, আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান সম্ভব, তবে এর জন্য দলের জনসংযোগ, নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক চর্চা পুনর্গঠন করতে হবে।

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অতীতে একাধিকবার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নেতৃত্বে ফিরে এসেছেন। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। দীর্ঘ শাসন আমলে ভিন্নমতের উপর দমন এবং নানা দুর্নীতিতে জরানোর ফলে আওয়ামী লীগ এখন জনবিচ্ছিন্ন। আওয়ামী লীগের জন্য ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের নেতৃত্বের বিচক্ষণতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের ওপর। এখন দেখার বিষয়, দলটি কি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুনভাবে গড়ে উঠতে পারবে, নাকি এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অধ্যায় হয়ে রয়ে যাবে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পাকিস্তানে সাইবার অপরাধ আইনের নতুন সংশোধনী, গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য হুমকি

পাকিস্তানে সাইবার অপরাধ আইনের নতুন সংশোধনী, গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য হুমকি

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে করণীয়

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট শিগগিরই চালু

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট শিগগিরই চালু

রাজশাহী রেলস্টেশনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার ১

রাজশাহী রেলস্টেশনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার ১

আশুলিয়ায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

আশুলিয়ায় অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা

মানবশুণ্য হয়ে পড়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন, ট্রেন চলাচল বন্ধে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মানবশুণ্য হয়ে পড়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন, ট্রেন চলাচল বন্ধে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কিছু নেই: জন ড্যানিলোভিজ

ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কিছু নেই: জন ড্যানিলোভিজ

আইসিসির প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগ

আইসিসির প্রধান নির্বাহীর পদত্যাগ

জাপানে কিয়োটো অ্যানিমেশন হত্যাকাণ্ডের আসামীর মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত

জাপানে কিয়োটো অ্যানিমেশন হত্যাকাণ্ডের আসামীর মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আজ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী কর্মশালা

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আজ কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী কর্মশালা

এবার পাকিস্তান ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্ক করল যুক্তরাজ্য

এবার পাকিস্তান ভ্রমণে নাগরিকদের সতর্ক করল যুক্তরাজ্য

এবার ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও সেবার মান বাড়াতে আইনি নোটিশ

এবার ইন্টারনেটের দাম কমাতে ও সেবার মান বাড়াতে আইনি নোটিশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাষণ্ড স্বামীর হাতে গৃহবধূ খুন!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাষণ্ড স্বামীর হাতে গৃহবধূ খুন!

গাজায় হামাসের ফেরার পথ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র-মিসরের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন: রুবিও

গাজায় হামাসের ফেরার পথ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র-মিসরের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন: রুবিও

পুলিশের ওপর হামলা: ছাত্রদলের দুই নেতা বহিষ্কার

পুলিশের ওপর হামলা: ছাত্রদলের দুই নেতা বহিষ্কার

মেলিন্ডার সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ছিল জীবনের ভুল: বিল গেট

মেলিন্ডার সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ছিল জীবনের ভুল: বিল গেট

দালালের দৌরাত্ম্য রোধে চাষি থেকে সরাসরি চা কেনা হবে: মেজর জে. সরওয়ার

দালালের দৌরাত্ম্য রোধে চাষি থেকে সরাসরি চা কেনা হবে: মেজর জে. সরওয়ার

সউদীতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার: আসিফ নজরুল

সউদীতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার: আসিফ নজরুল

খালেদা জিয়া দ্রুত দেশে ফিরতে উদগ্রীব: ডা. জাহিদ হোসেন

খালেদা জিয়া দ্রুত দেশে ফিরতে উদগ্রীব: ডা. জাহিদ হোসেন